আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে প্রকৃতি বা নিয়তি মানুষের ভাগ্য নির্ধারক। আসলে কিন্তু মানুষের ভাগ্য নির্ধারক মানুষ নিজেই। শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গো, সারা জীবন চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের হৃদয়ের মনিকোঠায় জায়গা করে নেবেন। আজ তার মৃত্যুর ১২১ বছর পরে আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো ঠিক তাই ঘটেছে; শিল্পী ভ্যান গো যা চেয়েছিলেন তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনে। তাঁর মৃত্যুর পর সারা পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে তিনি জায়গা করে নিয়েছেন। পৃথিবীর আর খুব কম শিল্পীই পেরেছেন তাঁর মত করে শিল্পী, শিল্প সমালোচক বা সাধারন মানুষের অনুপ্রেরণার উৎস হতে।
তাঁর আঁকা তৈলচিত্র Sunflower আজ পৃথিবীর দ্বিতীয় জনপ্রিয় শিল্পকর্ম, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির Mona Lisa ‘র পরেই।স্বল্পদৈর্ঘ্য একটি জীবন (মাত্র ৩৭ বছর) ও সেই জীবনের কিছু সময়কে (মাত্র ১০ বছর) কাজে লাগিয়ে মানুষের অন্তরে একটু ভালোবাসার জায়গা করে নেয়াই ছিলো তাঁর আরাধনা। সেই আরাধনারই ফলশ্রুতি, শিল্প-প্রকৃতি-মানুষকে ভালোবাসা নামক এক অদৃশ্য বন্ধনে বেঁধে দিয়ে গেছেন অত্যন্ত সফলতার সাথে।
১৮৯০ সালের ২৯ জুলাই থেকে ২০১১ সালের ২৯ জুলাই; এই একশো একুশ বছরে দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে, বিশ্বজনীন ভ্যান গো কে সবাই যখন দেখছে একজন কিংবদন্তী শিল্পী হিসেবে, তখন একান্ত ব্যক্তিগত ভ্যান গো কে নিয়ে আমার আজকের এই লেখা।

দক্ষিন হল্যান্ডের গ্রুট-যুনডার্ট, ৩০ মার্চ, ১৮৫৩ সালের এক বসন্ত দিনে জন্ম গ্রহন করেন এই পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৮৯০ সালের ২৯ শে জুলাই, সূর্যমুখী ফোটা ঋতুর এক রৌদ্দকরোজ্জল দিনে, সুদুর ফ্রান্সের ওভেয়ারস (Auvers) শহরে।
ভ্যান গো প্রথমত ভাবতেই পারেননি বা সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি, তিনি শিল্পী হবেন। পরিবারের প্রথম সন্তান হিসেবে ভ্যান গো‘কে পারিবরিক পেশা ধর্ম শিক্ষা দেয়ার জীবিকাকেই বেছে নিতে হয়েছিলো। যেখানে তিনি মন বসাতে পারেননি কোনো ভাবেই, যেভাবে পারেননি ভাইয়ের সঙ্গে, আর্ট ডিলারের কাজেও মন বসাতে। শেষ পর্যন্ত ২৭ বছর বয়সে ভ্যান গো খুঁজে পান তাঁর গন্তব্য।আমিও ঠিক ২৭ বছর বয়সেই খুঁজে পেয়েছিলাম আমার জীবনের গন্তব্যকে। ভ্যান গো নিজের স্বপ্ন কে আকার দেয়ার জন্য, জীবনের শেষ ১০ টা বছর একটানা শিল্পচর্চা করে যান। র্পূনাঙ্গতা দিয়ে যান নিজের স্বপ্নকে, আর পৃথিবীকে দিয়ে যান অসংখ্য কালজয়ী শিল্পকর্ম, যা শিল্পকলা ইতিহাসে দিয়েছে তাঁকে অমরত্ত্বের মর্যাদা। সর্বাপরি তাঁর ভক্তদের জন্য রেখে যান প্রায় নয়শোর মত হৃদয়স্পর্শী, অসাধারণ একগুচ্ছ চিঠি, যা তার অপুর্ব সুন্দর মনের দরজাকে করেছে উন্মুক্ত। তাঁর লেখা এই চিঠিগুলো তাঁর সমসাময়িকতো বটেই, সমগ্র শিল্পকলার ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমধর্মী অমুল্য সম্পদ।
শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা ও শিল্পীর স্বপ্ন:
নিভৃতচারী এই শিল্পী মিতভাষী ও অর্ন্তমুখী হওয়ার কারনেই বোধহয় চমৎকার চিঠি লিখতে জানতেন। জানতেন নিজেকে কিভাবে সুশৃঙ্খলভাবে প্রকাশ করতে হয়। বেশ কিছু শিল্পী বন্ধু ছাড়াও, শিল্পীর মা, ছোট বোন ও ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে মূলত চিঠির মাধ্যমেই যোগাযোগ করতেন ভ্যান গো। তবে ছোট ভাই থিওকেই (১৮৫৭-১৮৯১) সর্বাধিক চিঠি লেখেন ভিনসেন্ট । থিও যদিও ভ্যান গো এর চেয়ে বয়সে ছোট, কিন্তু বেশ দায়িত্ববান, দয়ালু ও উদার মনের মানুষ ছিলেন। যিনি আজীবন মানোসিক ও আর্থিক ভাবে সহযোগিতা দিয়ে এসেছিলেন অগ্রজ ভিনসেন্ট ভ্যান গোকে। থিওর নামও তাই এখন ভিনসেন্ট এর পাশাপাশি উচ্চারিত হয় মানুষের মুখে। তাই একথা বলতেই হয় থিওর অবদান ছাড়া আমরা, আজ বঞ্চিত হতাম ভিনসেন্টের অগনিত অসাধারণ শিল্পকর্ম থেকে।
আমার ক্ষেত্রে সর্ম্পূন উল্টো ঘটেছিলো যদিও, শৈশব থেকেই আমি চিনে নিয়েছিলাম আমার স্বপ্নকে। জানি না কিভাবে যদিও। কালো স্লেটে সাদা চকের রেখায় শুরু হয় আমার স্বপ্নের বীজ বপন। আমার বয়স যখন প্রায় পাঁচ বছর, স্কুল যাবার প্রস্তুতি, মা -বাবা কিনে দিলেন স্লেট আর চক। হাসের ছানা আঁকাতেই আনন্দ বেশী পেতাম, স্বরে-অ, স্বরে-আ লেখা শিখতে যেনো অনাগ্রহ । যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে পা বাড়ানোর সময় এলো, জেনে গেলাম আমার স্বপ্ন পূরণ হবার নয়। অন্ধকারে ছুঁড়ে দিলাম স্বপ্ন তৈরীর সব সরন্জাম। সেদিন কিন্তু আমার একমাত্র বড় ভাই এসে আমার পাশে না দাঁড়ালে, তার নিজের মতই আমার স্বপ্নও অসম্পূর্ন থেকে যেতো, উড়বার জন্য তারা পেতো না কোনো ডানা। ভিনসেন্ট’র পাশে সেদিন তাঁর ছোট ভাই থিও না থাকলে, পৃথিবীও পেতো না মহান এই শিল্পীকে। আজ ভিনসেন্টের মৃত্যুর এক শতাব্দী পরে আমি অতি সাধারন একজন মানুষ গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি থিওডোরাস ভ্যান গো কে তাঁর আত্মত্যাগের জন্য ও আমার অগ্রজকে তার অনুপ্রেরণার জন্য। যে তার নিজের স্বপ্নকে বাঁচাতে না পারলেও আমার স্বপ্নকে দিয়েছে প্রান। যুগে যুগে যারা এমন আত্মত্যাগের মাধ্যমে শিল্পকলাকে করেছেন পৃষ্ঠপোষকতা, শিল্পীদের দিয়েছেন মানোসিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা তাদের সবার জন্য আমার সশ্রদ্ধ সালাম।
ব্যাক্তিগত ভিনসেন্ট:
মৃত্যু মানেই যে শেষ হয়ে যাওয়া নয় তার প্রমান শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গো । প্রতিনিয়ত পৃথিবীর মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছেন তিনি, মিশে যাচ্ছেন তাদের হৃদয়ে। ভিনসেন্টের নামের সাথে আমার পরিচয় সেই স্কুল জীবন থেকে। যখন শুনে আসছি এক ক্ষ্যাপা শিল্পীর কথা, যে কিনা নিজের কান কেটে উপহার দেন তার প্রেমিকাকে। এরকম অনেক গুজব আছে যদিও এই আত্মদংশী প্রেমিক শিল্পীর নামে। কিন্তু তার খ্যাতিকে তা কোনোভাবে স্তিমিত করতে পারেনি । আমার জীবনের বিভিন্ন মোড়ে শিল্পী ভ্যান গো যুগিয়েছে প্রেরনা ও সাহস। ভিনসেন্ট আমার জন্য এমন এক অনুপ্রেরনার উৎস্য, শুধুমাত্র তাঁকেই আমার প্রিয় শিল্পী, আদর্শ ও র্দাশনিক বলতে পারি নিদ্বিধায়।
ভিনসেন্ট এই ছোট্ট নামের মাধ্যমেই আমি খুঁজে পেয়েছি আমার Soul Mate কে। যে নামটা আজও আমাদের মাঝে এক অদৃশ্য সেতুর মত ঝুলে থাকে। এক সুতোই বেঁধে রাখে শিল্প ও জীবন নিয়ে আমাদের স্বপ্নগুলোকে। সেদিন যেনো প্রেমেরে দেবতা কিউপিডের তীরধনুকের মতো কাজ করে ছিলো এই ছোট্ট শব্দটা। সে কারণে আমার ব্যাক্তিগত ভ্যান গো কিছুটা বিশেষ ও সতন্ত্র। আমার প্রিয় শিল্পী ভ্যান গো এর শিল্পকর্ম আমি দেখেছি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে ঘুরে। জেনেছি নানা অজানা কাহিনী এই মহান শিল্পীর সম্বন্ধে। অতপর: বই, চলচ্চিত্র ও জুগিয়েছে অনেক তথ্য। ভ্যান গো সম্বন্ধে আরো জানতে তৃষ্ণার্ত এই মন সর্বদা ব্যকুল । কারণ ভিনসেন্ট ভ্যান গো এর সম্মন্ধে জানার কোনো শেষ নেই। এই নাম অসীম এক মহাকাব্য সদৃশ্য।
প্রকৃত ভ্যান গো, অনন্য ভ্যান গো; একজন শিল্পী ও লেখক :
আমার জন্মদিনগুলো কাটে হয়তো বই কিনে অথবা আর্ট গ্যালারীতে ঘুরে। লন্ডনের পাতালরেলের দেয়ালে, ২০১০ এর শুরুতে একদিন দেখি সুবিশালপোস্টার: আসছে ২৩ জানুয়ারী থেকে ১৮ এপ্রিল অবধি লন্ডনের রয়্যাল একাডেমি অফ আর্ট এ চলবে দ্যা রিয়েল ভ্যান গো , দ্যা আর্টিস্ট এন্ড হিস লেটারস (The Real Van Gogh: The Artist and His Letters) শিরনামে এক প্রর্দশনী। ঠিক করে ফেলি এবারের জন্মদিনটা কাটাবো ভ্যান গো’র প্রর্দশনী দেখে। ভিনসেন্ট এর শিল্পকর্ম উপভোগ করবার থেকে তাঁর লেখা চিঠিগুলো দেখবার আগ্রহ যেনো বেশী ছিলো মনের মধ্যে। কেমন হবে দেখতে ভ্যান গো এর নিজের হাতে লেখা সেই সব চিঠিগুলো? প্রদর্শনীর শেষ সপ্তাহে দেখতে গেলাম, যদিও তা ছিলো আমার জন্মদিনের বেশ কিছুদিন পরে, তবুও উদ্দেশ্য ছিলো জন্মদিনটিকে স্মরণ করে রাখা।
প্রদর্শনীটি নিয়ে কিছু বলার আগে, বলতে হবে থিও পত্নী জোয়ানা ভ্যান গো’র কথা (Johanna Gesina van Gogh-Bonger : ১৮৬২-১৯২৫) ।
সবাই যাকে জো বলেই ডাকতো। সেই মহিয়সি নারী না থাকলে হয়তো আমাদের প্রিয় শিল্পী ভ্যান গো আমাদের সবার পরিচিত হয়ে ওঠার প্রক্রিয়াটা অসম্পুর্ন থেকে যেতো। ভ্যান গো বেঁচে থাকতে যেমন নিঃশর্ত সহযোগিতা পেয়েছিলেন ছোট ভাই থিওর কাছ থেকে। তেমনি ভ্যান গো ও থিওর এর মৃত্যুর পরে জোয়ানা এর একক প্রচেষ্টাতেই শিল্পজগতে প্রতিষ্ঠা পায় ভ্যান গো এর শিল্পকর্মগুলো। ভ্যান গোর মৃত্যুর ছয় মাস পরে জোয়ারা নিজেও হারায় তার স্বামী থিওকে। একটি সন্তান নিয়ে বাস্তবতার নান প্রতিকুলতার মুখেও তিনি আগলে রেখেছেন সেই সময়ের শিল্পজগতে প্রায় অপরিচিত ভ্যান গো’র শিল্পকর্ম আর থিওকে লেখা তাঁর সব চিঠি।
বুদ্ধিমতী এই নারীর বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন বাস্তবমুখী পদক্ষেপের কারণে, একটু একটু করে পৃথিবী জানতে পারে ভ্যান গো‘র অসাধারন প্রতিভার কথা। জোয়ানা ধাপে ধাপে জনপ্রিয় করে তোলেন ভিনসেন্টের শিল্পকর্মগুলো। তিনি অত্যন্ত দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন। বুঝতে পেরেছিলেন ভ্যান গো’র কাজের গুরুত্ব। তিনিই প্রথম উদ্যোগ নেন ভ্যান গো এর শিল্পকর্মগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ১৯০৫ সালে জো ভ্যান গো জন্মভুমি হল্যান্ডের আমস্টারডামের স্টেডেলিক মিউজিয়ামে ভ্যান গো’র স্মরণে তাঁর ৪৭৪ টা নির্বাচিত কাজ নিয়ে প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। জোয়ানা এর ছেলে ভিনসেন্ট উইলিয়াম ভ্যান গো স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন ‘সেই প্রদর্শনীতে দু‘মাসে সেখানে প্রায় দুহাজার দর্শক সমাগম হয়েছিলো’। আজ যে দেশ ভ্যান গো’র দেশ বলে পরিচিত সেখানে সেই সময় ভ্যান গো ছিল প্রায় নাম না জানা এক শিল্পী।সেটাই ছিলো আসলে জোয়ানা এর উদ্দেশ্য, ডাচদের হৃদয়ে তাদের অন্যতম সেরা সন্তান ভ্যান গো’র শিল্পকর্মগুলোকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে সবার আগে।
পর্যায়ক্রমেজোয়ানা, ভ্যান গো’র প্রতিটি শিল্পকর্মের ও চিঠির ধারাবাহিক তালিকা তৈরী করেন। তিনি ভ্যান গো’র চিঠিগুলো ফরাসী থেকে ডাচ ভাষায় অনুবাদ করেন । ১৯১৪ সালে তিনি ডাচ ভাষায় ভিনসেন্ট এর লেখা চিঠি গুলোর তিন খন্ডের একটা সংকলন বের করেন । এমনকি জোয়ানা ভ্যান গো পরিবারে পারিবারিক ইতিহাসও লিপিবদ্ধ করে রাখেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। এরপরে বহু ভাষায় অনুদিত হয়েছে চিঠিগুলো এবং খুব দ্রুত ভ্যান গো’র শিল্পকর্মের মতই চিঠিগুলোর জনপ্রিয়তাও ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে।
ভ্যান গো‘র চিঠির উপরে নানা গবেষনা ও প্রকাশনার ক্রমবিকাশের ধারায়, ভ্যান গো মিউজিয়াম আমস্ট্যারড্যামের ৩ জন বিশেষজ্ঞের ( Leo Jansen, Hans Luijten, Nienke Bakker) ১৫ বছরের গবেষনার ফসল, ছয় খন্ডের; ভিনসেন্ট ভ্যান গো : দ্যা লেটারস দ্যা কমপ্লিট ইলাস্ট্রেটেড এন্ড অ্যানোটেটেড এডিশন বইটি ( Vincent Van Gogh: The Letters the complete illustrated and Annotated Edition)।আর সেই গবেষনার ফলাফলের সমন্বিত প্রয়াশের প্রতিফলন বলা যায়; দ্যা রিয়েল ভ্যান গো , দ্যা আর্টিস্ট এন্ড হিস লেটারস প্রদর্শনীটিকে।
রয়্যাল অ্যাকাডেমি অফ আর্ট,লন্ডন এর সামনে প্রদর্শনীর লাইনে দাড়িয়ে তোলা (ফটো: লেখক)
সেই প্রর্দশনী দেখে আমার অনুভুতি ও অভিজ্ঞতা ছিলো ভিন্নরকম আবেগময়। একজন শিল্পী ও একজন সাধারন মানুষের মিশ্রনে একজন নতুন কোনো স্বত্তার অনুরণন। খুব মৃদু আলোতে দেখা শিল্পীর নিজে হাতে লেখা চিঠিগুলো সেদিন যেনো জলছিলো নক্ষত্রের মতো । যা আজকে শুধুই চিঠি বলে পরিচিত নয় বরং বিশ্ব সাহিত্যের অংশে রুপান্তরিত হয়েছে। প্রদর্শনীটিতে ৩৫ টার বেশী চিঠি অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছিল, যার অধিকাংশই লেখা থিওকে। কিছু চিঠি লেখা শিল্পী আঁন্তন ভান রাপপার্ড, শিল্পী এমিল বার্নার্ড ,শিল্পী পল গঁগ্যা ও ছোটবোন বোন উয়িলহেলমিনাকে অথবা তাঁর মাকে।
জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রেখেছেন চিঠির মাধ্যমে।সে সব চিঠিতে তিনি লিখে গেছেন মানুষের কথা, প্রকৃতির কথা , শিল্পকলা ও সাহিত্যের কথা। নিজের কাজের ক্রমবর্ধমান ধারাবহিক সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়া লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছেন চিঠিগুলোতে। যা শিল্পকলার ইতিহাসে একেবারেই বিরল, সতন্ত্র একটি ঘটনা। কোনো শিল্পীই নিজের শিল্পচর্চা বা শিল্পকর্ম সম্পর্কে এমন পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বর্ননা দিয়ে জাননি। শুধু শিল্পকর্ম নয় নিজের ব্যক্তিগত অনুভুতির কথাও ফুটে উঠেছে সেইসব টিঠি গুলোতে বেশ সতস্ফূর্ত ভাবে। আমার ধারনায় যে কোনো শিল্পচর্চায় শিল্পীর একান্ত ব্যক্তিগত অনুভুতিই দিতে পারে সেই শিল্পকর্মের প্রান। শিল্পকলার প্রান পুরুষ লিওর্নাদো দা ভিঞ্চিও যর্থাথই বলেছিলেন ‘A good painter has two great chief objects to paint man and the intention of soul’, ভ্যান গো’র শিল্পকর্মের জন্য উক্তিটি একেবারেই প্রযোয্য। ভ্যান গো’র শিল্পকর্মগুলো প্রকৃতভাবেই প্রানবন্ত ও উজ্জল ।
কিছু মানুষের জীবনে সফলতায় সফলতা আনে, কিছু মানুষের বিফলতা শেষপর্যন্ত সফলতায় পরিনত হয় । ভ্যান গো নিজের ভাগ্যকে নিজে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। চেয়েছিলেন তাঁর শিল্প কৌশল মানুষের হৃদয়ে পৌছে দিতে । ভাই থিওকে লেখা চিঠি গুলোতে বা অনান্য চিঠি গুলোতেও ভ্যান গো চিঠির সেই স্বল্প পরিসরে ছোট ছোট অলঙ্করন এঁকেছেন । তাঁর সমাপ্ত শিল্পকর্মের বা যে চিত্রকর্ম তিনি করতে যাচ্ছেন সেটার বর্ননা করতে গিয়ে তিনি ক্ষুদ্রাকৃতির আরো এক শিল্পকর্মের জন্মদিয়েছেন চিঠিগুলোর জমিনে। অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও নান্দনিকতায় ভরপুর চিঠি গুলোই শেষ পর্যন্ত শিল্পকর্ম হিসেবে প্রতিভাত হয়।
যদিও খুব স্বল্পায়ু ছিলো শিল্পী ভ্যান গো’র, কিন্তু মানুষ যখন বড় মাপের হন, কিংম্বা তাঁদের কাজ হয় ব্যাপক ও গভীর, তখন তাঁদের যাপিত জীবন, সেই স্বল্পদীর্ঘ সময়ের থেকে অনেক গুন বড় বলে প্রতিয়মান হয়, যেনো অনবদ্য মহাকাব্য এক। সেই বিশাল ব্যাপ্তিকে জানতে এক জীবন খুব কম সময়। যদিও এই প্রর্দশনীতে শিল্পী ভ্যান গো’র জীবন অভিনব ভাবে উপস্হাপিত করতে, তাঁর লেখা চিঠিগুলোকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে। চিঠিগুলো শিল্পীর যাপিত জবিনের প্রতিচ্ছবি হয়ে রয়ে গেছে। আয়নাতে প্রতিফলনের মতো, আজ আমরা দেখতে পায় সুস্পষ্টভাবে তাঁর জীবন কে চিঠির মাধ্যমে।
ভ্যান গো‘র প্রকৃত পরিচয় তাঁর কাজের মধ্যেই নিহিত রয়েছে, যার নির্জাস মেলে তাঁর লেখা চিঠিগুলোতে। ভ্যান গো’র আঁকা ১১০০ টা ড্রইংয়ের মধ্যে অর্পূব, অসাধারণ ৩০ টা ড্রইং এবং ৯০০টা পেইন্টিং এর মধ্যে ৬৫ টা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের পেইন্টিং অর্ন্তভুক্ত ছিলো এই প্রদর্শনীতে। ভিনসেন্টের বিখ্যাত তৈলচিত্র ‘পটেটো ইটারস’ এর ছাপচিত্র র্ভাশনটা দেখেতে পেয়ে, নিজের অভিজ্ঞতাকে আরো একটু ঋদ্ধ করে নিলাম। স্বল্প পরিসরে আঁকা এই লিথোগ্রাফটি মূলচিত্রটির থেকেও প্রানবন্ত মনে হলো। আরো যে সব তৈলচিত্র প্রদর্শনীটিকে করেছিলো সমৃদ্ধ সেগুলো হলো, দ্যা সোয়ার, দ্যা ওলিভ ট্রিস, সামার ইভিনিং, হসপিটাল এট সেন্ট রেমি, হুয়িট ফিল্ড উইথ ক্রো, দ্যা র্হাভেস্ট, পোট্রেট ওফ ড: গ্যাশে। বিগত ৪০ বছরে লন্ডনে এমন ব্যাপক প্রদর্শনী হয়নি ভিনসেন্টকে নিয়ে …. যা ছিলো সার্বিক ভাবে সফল ।
ভ্যান গো‘র চিঠি ও শিল্পকর্ম দেখেলে সহজেই অনুমেয়, পৃথিবীর মানুষের তাঁর সম্বন্ধে যে ভুল ধারণা পোষন করে শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গো যে মোটেই পাগল বা ক্ষেপা ছিলেন না বরং একজন প্রতিভাবান, স্বশিক্ষিত, গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন । তাঁর নিজের শিল্পকর্ম সম্বন্ধে তাঁর বর্ণনা, বিশ্লেষন আর পরিকল্পনা প্রমান করে ঠিক কতটা প্রতিভাবান ছিলেন।
ভ্যান গো তার চিঠিতে একবার বলেছিলেন–‘এখানে শিল্প বাস্তবতার চেয়েও বেশী বাস্তব’, সেই কথাটির যথার্থ বাস্তব প্রতিফলন ঘটেছে এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে। হাজার হাজার ভিনসেন্ট প্রেমিকদের হৃদয়ের গমক্ষেত যেনো প্লাবিত হয়েছে সূর্যস্নানে ।
২৯ জুলাই:১৮৯০
২৯ জুলাই সকালে ড:গ্যাশে কে দেখা যায় ওভেয়ারসের রাস্তায় সূর্যমুখীর তোড়া হতে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যেতে। উদ্দেশ্য রাভ্যুর সরাইখানা। যেখানে ভ্যান গো’র প্রতি শেষ ভালোবাসা প্রদর্শন করতে ছুটে যাচ্ছেন সবাই ড: গ্যাশের মত। ভ্যান গো’র প্রিয় ফুল যে সূর্যমুখী, প্রিয় রঙ হলুদ, তা হোমিওপ্যাথ ডাক্তার ও অপেশাদারী এই চিত্র শিল্পী ভালো ভাবেই জানতেন। গ্যাশে ভ্যান গো’র শেষ দিনগুলোর বন্ধু ছিলেন, ছিলেন চিকিৎসক ও। শোকে মূহ্যমান ড: গ্যাশে কান্না ধরে রাখতে পারছিলেন না আর ।
ভিনসেন্টের কফিন সাদা কাপড়ে ঢাকা, অজশ্র বুনো মিষ্টি ফুল সেই কফিনের উপরে ও চারপাশে। ওভেয়ারসের স্হানিয়রা এসেছে সবাই এই সাদাসিধে, দয়ালু,ভালো মানুষটিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। কফিনের মাথার কাছে ভ্যান গো’র পেইন্টিংগুলো এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যেনো একটা হ্যালো তৈরী করে। আর পায়ের কাছে রাখা হয়েছে তাঁর ব্যাবহৃত ইজেল, প্যালেট ও তুলিগুলো। সেই সময়ের প্রেক্ষিতে ভ্যান গো’র মত একজন অপরিচিত , নব্যশিল্পীর জন্য এর চেয়ে বেশী শ্রদ্ধার আর কীই বা হতে পারতো !
মাত্র ৩৭ বছরের জীবনে কে আর ধরে রাখতে পারলো না ভিনসেন্ট। জীবনের সব বন্ধনগুলো শিথিল মনে হলো তাঁর। কেও দিতে পারেনি তাঁকে একটুখানি আশার আলো বা দিতে পারেনি কেউ বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। গত এক বছর ধরে তিনি প্রায় ৬ বার ভীষন অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। তখনকার চিকিৎসকরাও জানতেন না কেমন করে তার চিকিৎসা করবেন। ভুল করে তাকে মানসিক রোগীর চিকিৎসাও দেয়া হয়েছে। এই সব যন্ত্রনা তাঁর জন্য হয়ে উঠেছিল অসহনীয়। ২৮ জুলাই ভাই থিও খরব পেয়েই ছুটে এলেন ভগ্ন শরীর ও বিধস্ত হৃদয়ে। মৃত্যু পথযাত্রী ভায়ের পাশ কাটিয়েছে শেষ প্রহরগুলো। ভ্যান গো অনবরত কথা বলে গেছে ছোট ভাই থিওর সঙ্গে। জীবনের কথা , শিল্পর কথা, মানুষের কথা। টোঠের ভাঁজে পাইপ গোজা। পেট ও বুকের মাঝে আটকে থাকা বুলেট ; যন্ত্রনা কাতর ভিনসেন্ট ফিস ফিস করে বলেছে ভাইকে ‘এ যন্ত্রনা শেষ হবার নয় !…..যদি এভাবে নীরবে চলে যেতে পারতাম …’
কি হয়েছিলো আসলে সে দিন ? ২৭ জুলাই ১৮৯০; ভ্যান গো নিয়মমাফিক ছবি আঁকতে বের হন, দুপুরের আহার শেষে। গম ক্ষেতের দিকে হাটতে থাকেন, সঙ্গে রাখেন একখানা মরনযন্ত্র, রিভলভার, কাজের সময় কাকদের উৎপাত থেকে বাঁচার জন্য ফাঁকা আওয়াজ করবেন বলে । সরাইখানার মালিকের কাছ থেকে ধার করা যদিও। কিন্তু কেনো সে হঠাৎ করে নিজের বুকের কাছে গুলি করে কেও জানে না আজো । সেই গুলিবিদ্ধ অবস্হায় ভিনসেন্ট ফিরে আসে, একা একা সরাইখানায়। সরাইখানার মালিক ও তার পরিবারের সদস্যরা ভিনসেন্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে কখন ভিনসেন্ট তাদের সাথে নৈশআহারে যোগদান করবে। কারণ ভ্যান গো তাদের সাথে সব সময় সময়মত আহারে যোগদান করতো বলে জানা যায় । সরাইখানার পরিবারের সদস্যরা উদগ্রিব হলে, এক পর্যায়ে ভ্যান গোকে আবিষ্কার করা হয় তাঁর রুমে, ব্যাথায় কুকড়ে আছে, বুকের নীচে ও ঠিক পেটের উপরে আটকে আছে বুলেট। …ভ্যান গোকে দেখে সরাইখানার মালিক রাভু চিৎকার করে ওঠেন…’’ও রে হতভাগা এ কি করেছো তুমি ?
ভ্যান গো উত্তরে বলেন, ‘আমি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলাম …’

ভিনসেন্টের বন্ধু শিল্পী এমিল বার্ণাড পরর্বতীতে এক চিঠিতে লিখেছিলেন, শিল্পী বন্ধু অ্যালবার্টকে,” “রবিবারে বিকালে সে বের হয় গ্রামের পথে ওভেয়ারস এ, তাঁর ইজেলটাকে রাখে খড়ের গাদায় হেলান দিয়ে, মাঠের শেষ প্রান্তে দাড়ানো একটা ছোট দুর্গ বা সাঁতোর পেছনে গিয়ে সে গুলি করে নিজের বুকে, কিন্তু গুলি ঢুকে যায় তার হৃদপিন্ডের নীচে, সে পড়ে যায়, উঠবার চেষ্টা করে, আবার পড়ে যায়, এভাবে তিনবার পড়ে যায় উঠে দাড়াবার আগে… ও শেষ পর্যন্ত রওনা দেয় যেখানে সে থাকে, সেই সরাইখানার দিকে। রাভু ও কাউকে কিছুই না জানিয়ে তাঁর এই যন্ত্রনার কথা।”
ভ্যান গো’র মৃত্যুর পরে তাঁর পকেটে পাওয়া যায় তার শেষ চিঠিটা অসমাপ্ত অবস্হায় ভাই থিও কে লেখা । ‘—ওহ সেটাই , আমি আমার জীবনকে বাজী রেখেছি আমার কাজের জন্য, আর আমার যুক্তি এর মধ্যেই অর্ধেক ডুবে আছে, বেশ, আর তুমিতো সেই সব ব্যবসায়ী মানুষদের মত নও। আমি যতটুকু জানি আর বিচার করতে পারি, আমি মনে করি তুমি সত্যিই মানবিকতার সাথে কাজ করেছো, কিন্তু তুমি আর কি করতে পারতে…’ ।
কোন প্রশ্নবোধক চিহ্ন ছাড়াই চিঠিটা শেষ হয়, আর সে কারনেই আরো বেশী হৃদয়স্পর্শী।
ভিনসেন্ট মারা যাবার পরে ভগ্ন হৃদয় থিও লিখছে তাঁদের মাকে –”জীবনকে তাঁর খুব ভার মনে হলো, সে ভার সে রাখতে পারলো না …. কিন্তু প্রায়ই এখন সবাই কতো প্রশংসা করছে তাঁর, এমনকি তাঁর প্রতিভারও … মা, সে ছিলো আমার আপন ভাই, আমার নিজের ভাই !”
আরো একটি চিঠিতে থিও লিখছে তাঁর স্ত্রী জোকে –”তাঁর শেষ কথাগুলোর একটা ছিলো ’আমি যদি এভাবেই চলে যেতে পারতাম,’ তার ইচ্ছাই পূরণ হলো সে চলে গেলো, কিছুক্ষনের মধ্যেই নীরবে …সব ক্ছিু স্তব্ধ হয়ে গেলো , সে খুঁজে পেলো সেই প্রশান্তি যা বেঁচে থাকলে পেতো না এই পৃথিবীতে …’’
অগ্রজের মৃত্যুতে থিও ভেঙ্গে পড়ে মানসিক ও শারীরিক ভাবে। এর ঠিক ছয় মাস পরে ২৫ জানুয়ারি ১৮৯১ সালে, ভ্গ্নশরীরে ও ভায়ের মৃত্যুর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে থিও ভ্যান গো’র ও মৃত্যু ঘটে। এখন তারা পাশাপাশি শুয়ে আছে ওভেয়ারসের ছোট্ট একটা সমাধক্ষেত্রে। যেখানে জো বিছিয়ে দিয়েছে ড: গ্যাশের বাগানের আইভি লাতা, একটা রৌদ্রজ্জল জায়গায় ওভেয়ারসের গমক্ষেতের মধ্যে, খোলা আকাশের নীচে শুয়ে আছে চিরশয়নে হরিহর আত্মা দুই ভাই। যেখানে রাত যত বাড়ে চাঁদের আলো তত গভীর হয় আর উজ্জল হয় নক্ষত্রগুলো।

সারা পৃথিবী যাকে জানে একজন পাগল ও ক্ষ্যাপা শিল্পী বলে, সে আসলে কেনো আত্মহত্যা করবার চেষ্টা করেছে যখন মধ্য বয়স তাঁর, উন্নতির দারপ্রান্তে দাড়িয়ে? কেনোই বা পৃথিবীর মানুষ এই ঋজু, দয়ালু, সৎ, উদার, সৃষ্টিশীল, সুশিক্ষিত মানুষটিকে চিনতে ভুল করেছে বার বার? কারণটা শিল্পী নিজে নন, কারণ হলো আমরা, এই পৃথিবীর মানুষ ! আজ আবার আমরাই পারি এই মহান শিল্পীকে তাঁর প্রকৃতরুপে চিনে নিতে এবং এক্ষেত্রে আমাদের পৃষ্ঠপোষকতাতেই বেড়ে উঠতে দিতে হবে ভিনসেন্টের জনেপ্রিয়তা, করতে হবে চিরস্হায়ী।
স্বপ্নকে সফল করতে হলে চাই যেমন পৃষ্ঠপোষকতা, শিল্পকে সঠিক গন্তব্যে পৌছে দিতেও পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন । সেই মিশরীয় সভ্যতা থেকে আজ আধুনিক কাল অবধী শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা হয়েছে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যক্তি পর্যায়ে। ব্যক্তিগত পর্যায়ের পৃষ্ঠপোষকতার উজ্জল দৃষ্টান্ত আজ যেমন আমাদের সামনে ক্রিষ্টালের মত স্বচ্ছ! শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গো’র নামের সাথে জুড়ে আছে আরো দুটি নাম, এক থিও ভ্যান গো অন্যটি জোয়ানা ভ্যান গো। যদিও ভ্যান গো জানতেন জীবনযন্ত্রনা থেকে তাঁর মুক্তি নেই কোনো ভাবেই, সেকারণেই বলেছিলেন বোধকরি — “The sadness will last forever . .. ”
অস্বিকার করবার উপায় নেই, আমার ব্যক্তিগত ভ্যান গো চিরকাল অমর হয়ে থাকবে আমার সৃষ্টির যন্ত্রনায় ও ভালোবাসার অহমিকায় !

