ক্ষয়িষ্ণু আকাঙ্ক্ষায় সবুজ জামার বাদামী বোতাম :

((((( শিল্পী ইগোন  সিলাহ্  জন্ম : ১২ জুন  ১৮৯০,  মৃত্যু : ৩১ অক্টোবর ১৯১৮)))))

কষ্টের রং হরেক রকম হতে পারে, কমলা  রঙের কষ্ট, সবুজ রঙের কষ্ট,   ধূসর  বা  বাদামী  রঙের কষ্ট। যে কষ্টের  জন্ম,  মানবমনের গভীরে জমে থাকা  রঙহীন সব স্মৃতির স্তর থেকে। প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া সব অভিজ্ঞতা গুলোই, মনোজগতের  অতল অন্ধকারে মিশে তৈরী হয়, পুন্জীভূত স্মৃতির  খনি।   ঘাপটি মেরে বসে  থাকে  একদিন  সূর্যের মুখ দেখবে বলে, সৃষ্টির প্রতীক্ষায়।  সৃষ্টি মানেই তো যন্ত্রনা,  ভালোবাসায় ভর করে আসা সেই যন্ত্রনা পরিশেষে, জন্ম দেয় অসম্ভব সুন্দর এক শিল্পকর্মের। যার  নান্দনিক সৌন্দর্য্য ব্যাখ্যা করা, সাধারনের  দু: সাধ্যের। যে পারে  অনুধাবন করতে, উপলব্ধি করতে,  সেই পারবে সে  সৌর্ন্দয্যকে  র্স্পশ করেত, করতে পারবে অভিব্যাক্ত ।

অস্ট্রিয়ান শিল্পী ইগোন সিলাহ্   অকালে হারিয়ে যাওয়া এমন এক তরুন শিল্পীর নাম, যার কাজের   সৌর্ন্দয্যকে  উপলব্ধি করতে সক্ষম, এমন খুব কম বোদ্ধা  শিল্পরসিকের দেখা মিলবে। শিল্পী মাত্রেই সবাই  নিজস্ব স্টাইল প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টা রত । কোনো কোনো, শিল্পীর গোটা জীবন লেগে যেতে পারে সে স্টাইল বা চিত্রের ভাষা গড়ে তুলতে। কারো বা গোটা আঠাশ বছরই লাগতে পারে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে, নিজের স্বতন্ত্র একটা স্টাইল গড়ে তুলতে। সেখানে  মাত্র আঠাশ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবনে    ইগোন সিলাহ্  জীবদ্দশাতেই  নিজেকে বিশ্বের অন্যতম  শ্রেষ্ঠ একজন  শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।  যেটা  শিল্পকলার ইতিহাসে খুব বিরল একটা ঘটনা তো বটেই এমনকি অসীম সাহসিকতায় ভরা ও বেদনাময়  এক কাহিনীও বলা যায়। এমন একজন তরতাজা তরুন  শিল্পীর জীবন মধ্য পথে থেমে যাওয়া মানে, শিল্পপ্রেমিকদের বহু দিক থেকে বঞ্চিত হওয়া। সময়ের অনেক আগে জন্ম নেয়া এই শিল্পীর কাজকে আজ অবধী কেও টপকাতে পারেনি,  যেমন পারেনি তাঁর  যথাযথ মূল্যায়ন করতে।  ইগোন সিলাহ্   নিজস্ব  বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র, আত্মবিশ্বাসী এমন এক  শিল্পী যার তুলনা একমাত্র সে নিজে এবং তাঁর কাজকে এক কথায় অকষ্টকল্পিত বললে অত্যুক্তি হবে না।

ইগোন সিলাহ্র জন্ম  ১৮৯০ সালের ১২ জুন, অস্ট্রিয়ার তুল শহরে। শৈশবের বেদনাময় প্রতিকূল দিনগুলোই হয়তো একজন শিল্পীকে ঠেলে দেয় তাঁর অবধারিত নিয়তির দিকে। ইগোন সিলাহ্,   বাবাকে হারান মাত্র  পেনেরো বছর বয়সে, মায়ের সঙ্গে তার সর্ম্পক ও খুব একটা  স্বাভাবিক ছিলো না।  পিতৃহারা বেদনা ও পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা তাকে হয়তো  আজকের ইগোন সিলাহ্   হতে সাহয্যে করেছিলো অনেকখানি।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী  অবস্হায় ইউরোপের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্হিরতা, তাঁকে আরো  প্রভাবিত করে  সৃষ্টিশীলতায় মেতে উঠতে।

portrait_egon-schiele

১৯০৬ সালে  ইগোন সিলাহ্  কে ভর্তি করানো হয়,  স্কুল ওব  আর্ট এন্ড  ক্র্যাফটে ( School of Art And Crafts)  যেখানে বিখ্যাত  শিল্পী গুস্তাভ ক্লিম্ট ও শিক্ষার্থী ছিলেন একসময়। কিন্তু  ইগোন সিলাহ্  কে  আরো প্রথাগত  ভাবে শিল্প শিক্ষার জন্য, এক বছরের মধ্যে পাঠিয়ে দেয়া হয়, এ্যাকাডেমি ওব ফাইন আর্টস ভিয়েনাতে (Academy of Fine Arts Vienna)। যেখানে ১৯০৭ ও ১৯০৮ সালে পরপর দু’বছর এডল্ফ হিটলার চেষ্টা করেও ভর্তি হতে পারেনি। সেখান থেকে  প্রায় তিন বছর পরে অত্যন্ত  অনাগ্র ভরে  শিক্ষা  গ্রহন শেষে, ইগোন সিলাহ্  বের হয়ে আসেন  এবং আরো অনান্য প্রথাবিরোধী  শিল্পীদের নিয়ে গড়ে তোলেন  একটা  গ্রুপ যার নাম দেয়া হয়  নিউ আর্ট গ্রুপ।

১৯০৯ ‍সালে শিল্পী ক্লিম্টের অনুরোধে  ইগোন সিলাহ্  বিভিন্ন  প্রদর্শনীতে  অংশ নেয়ার সুযোগ পান এবং  নরওয়েজিয়ান শিল্পী  এডর্ভাড  মুন্ক ও ডাচ  শিল্পী  ভিনসেন্ট ভ্যান গো এর প্রদর্শনী   দেখার সুযোগ পান। বিশেষ করে  ভ্যান গো  এর  সূর্যমুখির দ্বারা  অনুপ্রানিত হয়ে অনেক গুলো অসাধারণ চিত্র নির্মান করেন তিনি।

প্রাতিষ্ঠানিক  শিক্ষা শেষে  মৃত্যুর আগ  র্পযন্ত  সফলতার সাথে  স্হানীয়ভাবে ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে অনেকগুলো     প্রদর্শনীতে  অংশ নেন  ইগোন সিলাহ্। ‍জার্মানের  মিউনিখে  ইগোন সিলাহ্ এর প্রথম একক প্রদর্শনী  অনুষ্ঠিত হয়, প্যারিসেও  তাঁর একক  প্রদর্শনী   আয়োজন করা হয়।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়ার পরে তাঁর কাজে অনেক পরিপক্কতা আসে। সেসব চিত্র দিয়ে মৃত্যুর আগের বছরে, ১৯১৭ সালে বেশ কয়েকটা সফল প্রদর্শনী  আয়োজন করেন তিনি  যুরিখ, প্রাগ ও ড্রেসডেনে।

একজন আঠাশ বছরের যুবক যখন নিজের জীবনকে আবিষ্কার করছে, আবিষ্কার করছে পারিপার্শ্বিক, বিশ্বরাজনীতি, মানুষ, মানুষের মন ও শরীর, ঠিক তখনি মৃত্যু এসে কেড়ে  নেয় তাঁর, ভালোবাসা, ভবিষ্যৎ ও জীবন। এমন করুন পরিনতি হয়তো অবধারিত ছিলো যে প্রকৃতি তাকে  সেই সুযোগ  করে দিয়েছিলো, যা ইগোন সিলাহ্  উদারচিত্তে জীবনের সর্ম্পুন সময়টুকুকে কাজে লাগিয়ে গেছেন। শিল্পী ইগোন সিলাহ্র কাজে তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতার প্রভাব অত্যন্ত সুস্পষ্ট।

freund

তাঁর কাজের নানা ধরনের সমালোচনা করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে তাঁর কাজকে ইরোটিক ও  পর্নপ্রাফিক। মানুষের শরীরকে আবিষ্কার করতে গিয়ে তিনি আবিষ্কার করেছেন যৌনতাকে। প্রশ্ন করা হয় যদি  মূলত র্পাথক্য কোথায়,  যুদ্ধ ও যৌনতায় ? মানুষের গোটা জীবনতো পরিচালিত হয় তার শৈশবে ঘটে যাওয়া অভিজ্ঞতার  ভিত্তিতে ও যৌন  বিষয়ক অভিজ্ঞতার ফলস্রুতি ধরে। সে দিক থেকে  ইগোন সিলাহ্র সংক্ষিপ্ত জীবনতো বিচ্ছেদের বেদনায় ভরপুর। নিজের ভালোবাসার মানুষ ভ্যালেরির বিচ্ছেদের বেদনা  ও প্রথম  বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তাঁর  শিল্পর্কমকে প্রভাবতি করেছে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবে। ভালোবাসাকে হারানোর সেই কষ্টকে মৃত্যু তুল্য ভেবে এঁকে গেছেন,  ১৯১৫  সালে  ডেথ এন্ড দ্যা মেইডেন তৈলচিত্রটি।

ঘটনা  ক্রমে, ইগোন সিলাহ্  মৃত্যুর বছর তিনেক আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এদিথের সাথে। এদিথ, ইগোনের কাজের প্রেরণা হয়ে দেখা দেয়। আরো অনেকেরে মত ইগোন স্ত্রী, এদিথকেও  তাঁর  অসংখ্য শিল্পকর্মের মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছেন। নিয়তি যেখানে নিষ্ঠুর হাতে প্রতীক্ষা করে থাকে, যমদূতের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, সেখানে মানুষ অসহায় এক ক্ষুদ্রজীব মাত্র ।এদিথকে ইগোন হারান ইনফ্লুয়েনজা মহামারীতে, সাত মাসের   গর্ভে চলে যায় অদেখা সেই ছোট্ট শিশুটিও। এর ঠিক তিন দিন পরেই মৃত্যুবরন করেন শিল্পী ইগোন সিলাহ্। এই তিন দিনে তিনি অসংখ্য কাজ করে গেছেন এদিথকে নিয়ে। একজন শিল্পী আসলে একজন শিল্পী হয়ে উঠতে পারে তখনি, যখন সে একজন প্রকৃত প্রেমিক হতে পারে, সে কথা ইগোন সিলাহ্ আবারো হয়তো প্রমান করে গেলেন। এদিথের মলিন মুখ আমরা খুঁজে পায়, ইগোনের ক্যানভাসের  জমিনে।

Portrait of Edith Schiele in a striped dress by Schiele.jpg

(Portrait of Edith Schiele )

শিল্পী গুস্তাভ ক্লিম্ট যিনিও ১৯১৮ এর শুরুর দিকে মৃত্যু বরন করেন  আর   ইগোন সিলাহ্ মৃত্যু বরন করেন একি সালের  অক্টোবর মাসে। শিল্পী গুস্তাভ ক্লিম্ট, শিল্পী ইগোন সিলাহ্ – কে যে প্রভাবিত করেছেন অতন্ত সফলতার সাথে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। ক্লিম্ট বোধকরি শিল্পকলার ইতিহাসে প্রথম শিল্পী যার বিষয় বস্তু ছিলো, যৌন-আবোদনময়তা ও নারী শরীরের সৌন্দর্য্য।  গুস্তাভ ক্লিম্টের কাজকে সহজেই  সিম্বলিক  বলে ধরে নেয়া যায় বা  যেখানে অভিব্যাক্তিবাদের  (Expressionism) পরিস্ফুটন ঘটেছে অত্যন্ত সফলতার সাথে। সমসাময়িক আর্ট মুভমেন্ট   আর্ট  নুভো  (art nouveau)  এর প্রভাবও লক্ষ্যনীয় ক্লিম্ট এর কাজে।  অপরদিকে  ইগোন সিলাহ্র কাজকে  সিম্বলিক  বা  আর্ট  নুভো   কোনো শ্রেনীতেই নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ফেলা যায় না,  অভিব্যাক্তিবাদের  (Expressionism) কথা আমাদের মনে আসবে সে ক্ষেত্রে ।

ইগোন সিলাহ্ র  পরিচিতি গড়ে ওঠে নানা ধরনের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। বিশেষ  করে  তার আঁকা মানব শরীরের নগ্ন রেখা চিত্র, বিশেষভাবে সমালোচনা মুখে পড়ে,  কিন্তু   দর্শকরা যখন নগ্নিকার  কমলা রঙের স্তনবৃন্ত আবিষ্কার করেন ও আবিষ্কার করেন গাঢ়নীল রঙের স্টকিংস   তখন তারা দেখতে  ব্যার্থ   হন, সেই সব নগ্নিকাদের চোখে শুন্য বিষন্নতা ও যুদ্ধের ও ধ্বংসের  পূর্বভাস  বা পরর্বতী বিধ্বস্ততার  ইঙ্গিত। বস্ত্রহীনতা মানেই যে নগ্নতা নয় সেটা বোধ করি ইগোনের কাজের মাধ্যমেই প্রকাশ পায়। যে নগ্নতাকে মেলানো যায় না শিল্পী তিশানের ভিনাস ওব আরবিনো  বা  শিল্পী  এডুর্য়াড মানের অলিম্পিয়ার  সাথে। যেখানে নগ্ন শরীর মেলে ধরা হয়েছে দর্শকের সামনে, যেভাবে  তারা প্রতাশা  করে বা কামনা করে।  অথবা শিল্পী  রেনোয়ার স্বাহ্যবতী রমনীদের মত বিলাসিতায়ও  ডুবে নেই  ইগোনের নারী অবয়ব, পিকাসোর  চিত্রের মত লাস্যময়ীও নয় তারা। ইগোনের নগ্নিকারা যেনো, আবরনহীন ও অবিমিশ্র এমন এক কঠিন  সত্য  জীবনের, যা কষ্টের প্রহরকেই প্রকাশ করে চলেছে, অদ্ভুত  ভৌতিক এক  অভিব্যাক্তি  নিয়ে।

নিজস্ব কালার প্যালেট গড়তে সময় লাগেনি, শিল্পী ইগোন সিলাহ্র;  বাদামী, ধূসর, সবুজ, কমলা, হলদেটে, বা ধুসর কালো।  সেগুলো  হিংসার রঙ , বিষন্নতার রঙ,  শোকের রঙ,  যেনো  জীবনের এক মাত্র সত্যই হলো মৃত্যুর জন্য প্রতীক্ষা করা । দোমড়ানো মোচড়ানো শরীরগুলো বলে যায় যেনো নানা, না বলা কথা।   মানব কংকালের উপরে, চামড়া মোড়ানো শারীরিক গঠন, শুধু মাত্র কয়েকটা লাইন ড্রইংয়ের মাধ্যমে প্রকাশ করা, উচ্চমার্গের  প্রতিভার প্রকাশ বটে।

এশীয়  শিল্পেকলার প্রভাব (বিশেষ করে চীন বা জাপানি)  তখন ইউরোপীয় শিল্পীদের উপর পড়তে শুরু করেছে। ইম্প্রেশনিস্ট শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গো থেকে  শুরু করে এক্সপ্রেশনিস্ট শিল্পী ইগোন সিলাহ্  বেশ গভীর ভাবেই সে প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছেন।  শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু প্রধান, যেখানে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই,  প্রধান বিষয়বস্তু বা ফোরগ্রেউন্ড যেনো শুন্যে ভাসছে । তাতে করে একটা অদ্ভুত দদুল্যমনতা সৃষ্টি হয়,  দর্শকের মনে প্রশন্ থেকে যাবে এর পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতা  সম্পর্কে। কিন্তু ‍ চিত্রের বিষয় নিজেই বলে দেবে পারিপার্শ্বিকতার  কথা। এমন ধরনের ব্যাকগ্রাইন্ডহীন চিত্রের  কম্পোজিশন শুধু ফিগারেটিভ কাজের  ক্ষেত্রেই করেছেন সিলাহ্, তাঁর ভূ-দৃশ্যগুলো বরং ঠিক উল্টো, বাড়ীঘর বা গাছপালাগুলো যেনো এক একটা বির্মূত অবয়ব হয়ে উঠেছে,  হয়ে উঠেছে ঘন ও অন্তরঙ্গ।

Egon_Schiele_0

শিল্পী ইগোন সিলাহ্ মানেই যেনো  ন্যুড ড্রইং,  সাধারণের তাই মনে হতে পারে। কিন্তু তিনি বিষয়বস্তুতে ছিলেন সমসাময়িক। মানব শরীর নিয়ে পরীক্ষা – নিরীক্ষা করা ছাড়াও তিনি ভূ-দৃশ্যের অনেক গুলো তৈল চিত্র এঁকেছিলেন। যাদের ভাষা অত্যন্ত বিষণ্ন ও শোকাচ্ছন্ন।হালকা ধূসর  বা ছাইরঙা ব্যাকগ্রাইন্ডের  সামনে  র্শীনকায় গাছেদের  দোমড়ানো শরীর অনেকটা ছায়া নৃত্যের মত খেলা করে যায় দৃশ্যপটে। অস্ট্রিয় স্হানীয় লোকালয়, বাড়ীঘর গুলোকে মনে হতে পারে দল বেধে চলা কোনো শবযাত্রা। ধূসর- কমলা, গাঢ় বাদামী বা কালচে সবুজে আঁকা সেই সব ভূ-দৃশ্যগুলো যেনো  এক যুদ্ধ  পূর্ববর্তী থমথমে পরিবেশ বা যুদ্ধ পরবর্তী বিদ্ধস্ত বাস্তবাকেই প্রকাশ করে। হাইস উইথ বিউটিফুল লন্ড্রি –স্বতন্ত্র বৈশিষ্টে ভরা এমন একটা কাজের উদহরন হতে পারে। বৃক্ষের শরীরের সাথে মানব শরীরের সাদৃশ্য ও  ছন্দ দৃষ্টি এড়ানো সম্ভব না ।

আত্মপ্রতিকৃতি র্নিমানে  শিল্পকলার ইতিহাসে,  শিল্পী ইগোন সিলাহ্ এক ও অদ্বিতীয় । নিজের মানসিক অবস্হাকেই প্রকাশ করে  তিনি  ভিন্ন আঙ্গিকে, বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন  সময়ে কাজ করে গেছেন যে গুলো  অবিমিশ্রভাবে  আত্মজীবনিমূলক। ইগোন সিলাহ্ র প্রসস্ত কপাল, এলোমেলো ঘন চুল, গভীর চোখ, শীর্নকায় শরীর, হাতের আঙ্গলগুলো আরো শীর্ন ও লম্বাকার ও তাদের মেলে ধরায় যে নতুনত্ব, বোধ করি তা ইগোন সিলাহ্ র কাজ কে করেছে আরো স্বত্ন্ত্র।

egon-schiele-sunflowers-31622

স্প্যানীশ শিল্পী পাবলো পিকসোর মত রাজ ভাগ্য নিয়ে কয়জন শিল্পীর জন্ম হয়? অনুকুল পারিপার্শ্বিকতা ও সহজলভ্য পৃষ্ঠপোষকতায়  শিল্পী হয়ে ওঠার সহায়ক পরিবেশ কয়জন পায়?  কী জীবদ্দশায়, কী মৃত্যুর পরে   সহজলভ্য সাফল্যের মোহ শিল্পী ও পৃষ্ঠপোষকদের অদম্য উচ্ছাস। শিল্পী ইগোন সিলাহ্  এর মত প্রতিভা সময়ের আগে জন্ম  নেয় ও  হারিয়ে যায় সময়ের আগেই। জীবনের পথটুকু শুধু হেঁটে যায় সময়ের বিপরীতে। অপ্রাপ্তবয়স্ক নগ্ন শরীর আঁকার অপরাধে ২১ দিন রিমন্ডে রাখার পরে যখন ইগোনকে, ৩ দিন কারাগারে আবদ্ধ করে রখো হয়েছিলো, যেখানে সে অসংখ্য আত্মপ্রতিকৃতি র্নিমান করতে ভুলেননি। ক্ষোভ ও করুনা ভরে বলেছিলো শিল্পী ইগোন সিলাহ্ :

‘I do not feel punished; rather purified’; ‘To restrict the artist is a crime. It is to murder germinating life.’

অস্ট্রিয়ান অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে অস্কার কোকোশকা ও গুস্তাভ ক্লিম্ট এর পাশাপাশি ইগোন সিলাহ্’র নাম ও উজ্জল হয়ে জ্বলে থাকবে  চিরকাল  সে কথা অনস্বীর্কায।  সুদূর ইউরোপিয়ান শিল্পী ইগোন সিলাহ্র  বিষণ্ন ধূসর সেই সব  শিল্পকর্মের সাথে কেনো যেনো অদ্ভুত এক সাদৃশ্য রয়েছে, সমসাময়িক বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার যাকে আমরা –  বিষণ্নতার কবি বলেই জানি। এছাড়া তাদের মধ্যে অদ্ভুত এক মিল আছে তা হলো দুজনেই ছিলেন পোড় খাওয়া প্রেমিক।

থমথমে রাত, আমার পাশে বসল অতিথি-
বললে, আমি অতীত ক্ষুধা-তোমার অতীত স্মৃতি!
-যে দিনগুলো সাঙ্গ হল ঝড়বাদলের জলে,
শুষে গেল মেরুর হিমে, মরুর অনলে,
ছায়ার মতো মিশেছিলাম আমি তাদের সনে;
তারা কোথায়?-বন্দি স্মৃতিই কাঁদছে তোমার মনে!

http://youtu.be/0Tslqy-Wlvg

2 Replies to “ক্ষয়িষ্ণু আকাঙ্ক্ষায় সবুজ জামার বাদামী বোতাম :”

  1. তোমার লেখায় কি কমেন্ট করব বুঝতে পারি না… একই রকম মুগ্ধ হই সব লেখাতেই… তুমি ভালবাসা দিয়ে লেখ… সত্যিকারের আবেগ থাকে তোমার জীবনী লেখাতে…

    Like

Leave a comment